স্টাফ রিপোর্টার:রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নূরে আলম মিনাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে বদলি করা হয়েছে। এরআগেও তিনি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
মঙ্গলবার (১৩ জুন) পুলিশের সাত জন উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ও ২২ জন পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপ-সচিব সিরাজুম মুনীরা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনের তথ্য অনুযায়ী, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নূরে আলম মিনাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেনকে পুলিশ সদর দফতরে, অ্যান্টি-টেরোরিজম ইউনিটের ডিআইজি মো. মনিরুজ্জামানকে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, শিল্পাঞ্চল পুলিশের ডিআইজি শেখ মোহাম্মদ রেজাউল হায়দারকে কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক, এসবির ডিআইজি মোহাম্মদ আবুল ফয়েজকে শিল্পাঞ্চল পুলিশে, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পরিচালক সালেহ মোহাম্মদ তানভীরকে এসবিতে ও শিল্পাঞ্চল পুলিশের ডিআইজি জিহাদুল কবিরকে ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (মেট্রোরেল) পুলিশে বদলি করা হয়েছে।
নুরে আলম মিনা ১৯৭৬ সালে গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ হতে বিএসএস (সম্মান) ও এমএসএস সমাপ্ত করে ২০তম বিসিএসের মাধ্যমে ২০০১ সালে বাংলাদেশ পুলিশে সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন।
বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি, সারদা ও রাজশাহী থেকে প্রশিক্ষণ শেষে ২০০২ সাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বিলাইছড়ি, রাঙ্গামাটি ও মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সার্কেল পদে সুনাম ও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৬ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে রেলওয়ে জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী জেলা ও ডিএমপি এডিসি (রমনা বিভাগ), কক্সবাজার এবং চট্টগ্রাম জেলায় দায়িত্ব পালন করেন।
২০১২ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১৩ সালের ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত তিনি সুনামগঞ্জ জেলায় এবং ২০১৬ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত সিলেট জেলার পুলিশ সুপার পদে ছিলেন। এরপর চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি পেয়ে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক হিসেবে রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয় ঢাকায় অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। পরবর্তীতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার হিসেবে যোগ তিনি।
নুরে আলম মিনা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর দারফুর, সুদান মিশনে দায়িত্ব পালনকালে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদকপ্রাপ্ত হন। বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ‘বেস্ট-ইন-একাডেমিক্স’ পদকে ভূষিত হন। বাংলাদেশ পুলিশে তার অসাধারণ দায়িত্ব পালনের জন্য ২০১৩ সালে প্রেসিডেন্ট পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা, ২০১৪ সালে ‘আইজিপি ব্যাজ’ এবং ২০১৮ সালে জঙ্গি দমনে অসীম সাহসিকতার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)- সাহসিকতা পদক লাভ করেন। ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি রাজারবাগ প্যারেড গ্রাউন্ডে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সেবা, কর্মদক্ষতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ পদক গ্রহণ করেন।
চাকরি জীবনে তিনি দেশে বাস্তব প্রশিক্ষণ ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। এছাড়াও মালয়েশিয়ায় কুয়ালালামপুরে রয়েল মালয়েশিয়ান পুলিশ কলেজ থেকে ‘ব্যাসিক কমার্শিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন কোর্স’ সম্পন্ন করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত এবং দুই কন্যা ও এক ছেলে সন্তানের জনক।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রশ্নে আপসহীন নুরে আলম মিনা মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গি দমনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। জনবান্ধব সেবামুখী পুলিশিং নিশ্চিতকরণে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রমকে জোরদার করার পাশাপাশি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় আর্তমানবতার সেবায় উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। প্রবাসে কর্মরত চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দাদের পুলিশি সহায়তার জন্য তিনি চালু করেছেন ‘প্রবাসী সহায়তা ডেস্ক’। যা সর্বমহলে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে।