আজ ৪ঠা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাঁচ পুলিশ ও আইনজীবীসহ ১৩ জনের কারাদণ্ড

ফেনীর বহুল আলোচিত ছয় লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার মামলায় পাঁচ পুলিশ সদস্য ও আইনজীবীসহ ১৩ জনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ এর বিচারক সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফ এ রায় দেন।রায়ে প্রধান আসামি এসআই মাহফুজসহ ৬ জনকে ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ ১ লাখ টাকা জরিমানা, ৬ জনকে ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ১ জনকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডসহ ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন আদালত।ফেনীর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বনিক যুগান্তরকে জানান, রায়ে এসআই মো. মাহফুজুর রহমান, এসআই মো. বিল্লাল হোসেন বেলাল, এসআই মো. আশিকুর রহমান আশিক, সালেহ আহমদ, ফরিদুল আলম ফরিদ কোম্পানী, মো. জাফর কোম্পানীর ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও ১ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া অ্যাডভোকেট জাকির হোসেন, তোফাজ্জল হোসেন, কনস্টেবল মো. শাহীন এসবি শাহীন, মো. আব্দুল মোতালেব মুহুরী, কনস্টেবল কাশেম আলী কাশেম, গিয়াস উদ্দিন গেসুর ১০ বছরের কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড হয়েছে। মো. জাবেদ আলীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেন আদালত।রায় ঘোষণার সময় আদালতে ৮ জন আসামি উপস্থিত ছিলেন। পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। পলাতক আসামিরা হলেন- পুলিশ আবুল কাশেম কাশেম, আব্দুল মোতালেব মুহুরী, বিল্লাল হোসেন বেলাল, আশিকুর রহমান আশিক, জাফর কোম্পানী।

আসামিপক্ষের আইনজীবী জাহিদ হোসেন কমল জানান, আমরা এরায়ে সন্তুষ্ট নই। রায়ের বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করব। আশা করছি আমরা ন্যায়বিচার পাব।

রাষ্ট্রপক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক। আসামিপক্ষে রয়েছেন অ্যাডভোকেট ফয়েজুল হক মিলকী, আনেয়ারুল ইসলাম ফারুক, জাহিদ হোসেন কমল, মীর মোশাররফ হোসেন মানিক ও তাজুল ইসলাম ভূঞা।

এপিপি দ্বিজেন্দ্র কুমার কংস বণিক জানান, ১ মার্চ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত-১ সৈয়দ মো. কায়সার মোশাররফ ইউসুফের আদালতে এ মামলার পূর্ণাঙ্গ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় প্রধান আসামি পুলিশের বরখাস্তকৃত এএসআই মাহফুজসহ ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় ৩৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৬ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। গত বছর জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে ২৯ অক্টোবর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি করা হয়। এ মামলায় একসাথে ৬ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পিপি অ্যাডভোকেট হাফেজ আহাম্মদ জানান, গত বছরের ৬ মার্চ তৃতীয় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডির কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। ৭ বছরে চাঞ্চল্যকর এ মামলায় তিন ম্যাজিস্ট্রেট, মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা ও মামলার বাদীসহ ১৬ জন সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। মোট ৩৯ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এ মামলার মোট আসামী ১৩ জনের মধ্যে ৮ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ৫ আসামি পলাতক রয়েছেন।

২০১৯ সালের ১৭ মে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তোফাজ্জল হোসেন। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এ মামলার ৯ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তোফাজ্জল কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌরসভার বাসিন্দা। মাহফুজ ফেনী পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের বিশেষ শাখায় কর্মরত ছিলেন। তারপর সেখান থেকে বদলি হয়ে যান।

একই সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২১ জুন শহরতলীর ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইয়াবার ট্রানজিট পয়েন্ট লালপোলে একটি শিশুকে ধাক্কা দিয়ে প্রাইভেটকার নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলেন এএসআই মাহফুজুর রহমান। র্যা ব-৭ এর একটি দল গাড়িটি ধাওয়া করে তাকে আটক করে। পরে তার গাড়ি থেকে ৬ লাখ ৮০ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট ও নগদ ৭ লাখ টাকা উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশের এএসআই মাহফুজুর রহমান ও গাড়িচালক জাবেদ আলীকে গ্রেফতার করা হয়। র্যা বের পক্ষ থেকে নায়েক সুবেদার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে ২০১৫ সালের ২২ জুন ফেনী মডেল থানায় মাদক আইনে মামলা দায়ের করেন।

মামলা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় ফেনী মডেল থানার তৎকালীন ইন্সপেক্টর মো. শাহীনুজ্জামানকে। তিনি ২০১৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। আদালত সন্তুষ্ট না হলে পুনঃতদন্তের জন্য সিআইডি পুলিশকে নির্দেশ দেন।

২০১৬ সালের ২২ মে দ্বিতীয় মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডি ইন্সপেক্টর আবুল বশর অভিযোগপত্র জমা দিলে আদালত গ্রহণ করেনি। আদালত পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দেন। ১৩ জনকে আসামি করে ২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তৃতীয় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লা জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল উদ্দিন।

চাঞ্চল্যকর এ মামলাটিতে এএসআই মাহফুজুর রহমানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর অভিযোগ গঠন করে ১০ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত।

     এই ক্যাটাগরির অন্যান্য নিউজ