আজ ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

দেশে প্রথমবারের মতো আইএসটিএ সনদ পেল লাল তীর

স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্বের সর্বোচ্চ বীজের মান নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সিড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের (আইএসটিএ) স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে লাল তীর সিড লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এমএনটি সিড টেস্টিং ল্যাবরেটরি। দেশের প্রথম কোনো বীজ পরীক্ষাগার এ সনদ পেল।

শুক্রবার ২৩ জুন গাজীপুরের বাসনে লাল তীর সিড লিমিটেডের প্রধান গবেষণা কেন্দ্রে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, লাল তীরের এমএনটি বীজ পরীক্ষাগার বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি খাতে বীজের মান নির্ণয়কারী পরীক্ষাগারগুলোর মধ্যে প্রথম বিশ্বের সর্বোচ্চ বীজমান প্রত্যয়ন সংস্থার স্বীকৃতি ও সনদ পেয়েছে। এখন থেকে এ পরীক্ষাগারের দেওয়া বীজের গুণমানের প্রত্যয়পত্র বিশ্বের সব দেশের সরকার ও বেসরকারি খাতে গ্রহণযোগ্য হবে।

লাল তীরের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, দেশের সার্বিক উৎপাদনশীলতা বাড়াতে আমাদের ল্যাবের এ স্বীকৃতি বড় প্রভাব ফেলবে। পাশাপাশি বিদেশে বীজ রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচন হবে। এটি দেশের বীজ উন্নয়ন ও আমাদের পরীক্ষাগারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকৃতি।

তিনি জানান, লাল তীর এখন বার্ষিক ১২ হাজার টন বীজ সরবরাহ করছে, যার মধ্যে ৯০ শতাংশ সবজিবীজ। গত বছর লাল তীর ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের বীজ রপ্তানি করেছে। লাল তীর প্রায় ১৫টি জাতের বীজ রপ্তানি করে। এবার হয়তো রপ্তানি ১৫ লাখ ডলার হতে পারে। এই সনদ রপ্তানি বৃদ্ধিতে আরও ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

মিন্টু বলেন, এক সময়ে দেশে ফসল উৎপাদনের একটি বড় বাধা ছিল মানসম্পন্ন বীজের অভাব। স্থানীয় জার্মপ্লাজম ব্যবহার করে বিভিন্ন ফসলের হাইব্রিড ও উন্মুক্ত পরাগায়িত উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করাই ছিল আমাদের এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্য অর্জনে শুরু থেকেই গবেষণা ও প্রজননের মাধ্যমে জাত উন্নয়নের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

তিনি বলেন, ভারতসহ পৃথিবীর কোথাও আমাদের টিয়া করলার বীজের চেয়ে ভালো জাত নেই। কিন্তু ভারতে নানা আইন থাকায় দেশটিতে আমরা বীজ রপ্তানি করতে পারি না। অথচ আমাদের দেশ থেকে এ জাতের বীজ ভিন্ন উপায়ে ভারতে যাচ্ছে। ভারতে যাতে বীজ রপ্তানি করা যায় সে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারকে বারবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো উদ্যোগ দেখছি না।

সংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে লাল তীরের চেয়ারম্যান বলেন, উৎপাদন বাড়াতে বীজ প্রধান উপকরণ। সরকারি বিভিন্ন সংস্থা (ব্রি ও বারি) ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। আমরা এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে বলেছি, নতুন কোনো বীজ আসলে তার কিছু আমাদের দিতে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানগুলো জানায়, আইনে নেই। একমাত্র বিএডিসিকেই তারা বীজ দিতে পারবে। যেহেতু মাঠ পর্যায়ে আমরা বীজ সম্প্রসারণ করছি,আমাদেরকেও উদ্ভাবিত নতুন জাত দেওয়া উচিৎ। এতে নতুন বীজ দ্রুত সম্প্রসারিত হবে।

লাল তীরের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুব আনাম বলেন, বাংলাদেশে উৎপাদিত লাল তীরের বীজ দেশের বাইরে মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকায় রপ্তানি করা হচ্ছে। ২০১৫ সালে ইন্টারন্যাশনাল সীড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ অর্জন করার পর থেকে আমাদের পরীক্ষাগার তাদের সব পদ্ধতি-প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বীজের গুণগতমান পরীক্ষা করে আসছে। এই সংস্থা ২০১৫ সাল থেকে দীর্ঘ সাত বছর আমাদের কার্য-প্রক্রিয়া ও পদ্ধতি যাচাই-বাছাই ও বহুমুখী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ২০২৩ সালের মে মাসে বীজ পরীক্ষাগারকে বিশ্ব মানসম্পন্ন হিসেবে স্বীকৃতি সনদ অনুমোদন করেছে। ইতোপূর্বে আমাদের পরীক্ষাগার বাংলাদেশ সরকারের শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড কর্তৃক স্বীকৃতি সনদ অর্জন করেছে। অছাড়া বিশ্ব মানদণ্ডে গুণমানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইএসও) কর্তৃক প্রত্যয়িত।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৮৩টি দেশের ১৩০টি ল্যাবরেটরি ইন্টারন্যাশনাল সীড টেস্টিং অ্যাসোসিয়েশনের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এবং বীজের মান নির্ণয় ও সনদ দেওয়ার জন্য অনুমোদিত। এসব পরীক্ষাগার আন্তর্জাতিক বীজ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বীজের গুণমানের সনদপত্র কমলা এবং নীল) ইস্যু করার জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এই সনদ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত।

লাল তীর সিড লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার ড. আব্দুর রশিদ বলেন, ১৯৯৫ সালে লাল তীর সীড লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি বেসরকারি খাতে প্রথম গবেষণাভিত্তিক বীজ কোম্পানি। এ পর্যন্ত লাল তীর ৩৫টি বিভিন্ন ফসলের ১৯৯টি জাত উদ্ভাবন করেছে, যার মধ্যে ৮৭টি হাইব্রিড। পাশাপাশি দেশি জাত সংরক্ষণে এ পর্যন্ত লাল তীর বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে বিভিন্ন ফসলের ১ লাখ ৩০ হাজার জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করেছে।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের আন্তর্জাতিক বীজ সূচকে সপ্তম অবস্থানে উঠে আসে লাল তীর। সবজিবীজের প্রবক্তা হিসেবে দেশে লাল তীরের সুনাম রয়েছে। ২০১০ সাল থেকে লাল তীর ধানবীজের উৎপাদন ও বিপণন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

     এই ক্যাটাগরির অন্যান্য নিউজ