আজ ২৭শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর টাকা-জমি আত্নসাতের অভিযোগ,স্বামীর মানবেতর জীবনযাপন

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধিঃ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সৈয়দপুর ইউনিয়নে এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে খোকনের জন্ম হয়। গত কয়েক বছর আগেও আর্থিকভাবে তারা সচ্চল ছিল। আশেপাশের এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই তাদের জমি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করত। এছাড়াও তাদের পরিবার বিপদে-আপদে মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করতো। এখন ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তারা নিজেরাই সাহায্যের জন্য দ্বারে দ্বারে অন্যদের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছে। খোকনের বৃদ্ধ মা সালেহা বেগম ত্রাণ সংগ্রহের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।

এমন ঘটনার শিকার হয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন সীতাকুন্ডের সৈয়দপুর ইউনিয়নের কেদারখীল গ্রামের এক মানসিক বিপর্যস্ত ছেলে খোকনের। তার বাড়িতে এখন তার বৃদ্ধ মা ছাড়া কেউ নেই। মুখে সোনার চামচ নিয়ে বেড়ে উঠা খোকনের বাবা ছিলেন অঢেল সম্পদের মালিক। বাবার মৃত্যুর পর খোকন এক একর বিশ শতক জমির মালিক হন। এছাড়া বৃদ্ধা মা সালেহা বেগম ও বোন আসমা আক্তার তাদের মালিকানাধীন আরও ৬৫ শতক জমি খোকনকে দান করেন।

জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরপুর গ্রামের শাহ আলমের মেয়ে সেলিনা আক্তারের সঙ্গে ২০০৬ সালে বিয়ে হয় খোকনের। ছোটবেলা থেকেই তিনি কিছুটা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন। বিয়ের পর পরিবারের সুখের জন্য খোকন এক একর ৮৫ শতক জমি বিক্রি করে যার মুল্য প্রায় দুই কোটি টাকা স্ত্রীর হাতে তুলে দেন। এছাড়াও স্ত্রী সেলিনা অপকৌশল করে খোকন ও তার বৃদ্ধ মায়ের কাছ থেকে প্রতারণা করে অবশিষ্ট বাড়ির ২৮ শতক জায়গাও নিজের নামে দলিল করে বাড়ি থেকে উচ্ছেদের চেষ্টা করেন। এই ঘটনায় গ্রামবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে এবং যে কোনো মূল্যে খোকন ও তার মায়ের একমাত্র আশ্রয়স্থলটিকে (বসত-ভিটা) অন্যত্র বিক্রির হাত থেকে রক্ষা করে।

এদিকে, মানসিক বিকারগ্রস্ত খোকনের অসুস্থতার সুযোগে স্ত্রী সেলিনা প্রতারনা করে আত্নসাতকৃত জমির দলিল বাতিলের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছেন খোকন। আদালতে ন্যায় বিচার পাবেন বলে আশ্বাবাদী অসুস্থ খোকন ও তার বৃদ্ধা মা সালেহা বেগম।

অন্যদিকে টাকার লোভে অন্ধ হয়ে সেলিনা বসত-ভিটার জমির দখল নিতে আপ্রাণ চেষ্টা চালায়। মানসিক বিকারগ্রস্ত খোকন, তার বৃদ্ধ মা ও তার মামা মহিউদ্দিনের নামে একের পর এক মামলা করতে থাকেন সেলিনা। এছাড়াও স্ত্রী সেলিনা আক্তার খোকনকে তার বাসত- ভিটা থেকে জসিম নামে এক ডাকাতকে নিয়ে বহুবার উচ্ছেদের চেষ্টা করছে এমন অভিযোগ করছেন খোকনের বৃদ্ধ মা সালেহা বেগম।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তার বৃদ্ধা মা তার ছেলে খোকন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ে থাকায় তাকে সাহায্য করতে এবং তার পরিবারের খরচ চালাতে সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হচ্ছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছেলেকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে বৃদ্ধা মা সালেহা বেগম।
সালেহা বেগম বলেন, আমার ছেলে খোকন ও আমি সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছি। খোকনের স্ত্রী সেলিনা আক্তার এখন আমাদের বাড়ি-ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন। একের পর এক মামলা ও ডাকাত দিয়ে আমাদের বারবার হুমকি দিচ্ছে। আমার ছেলে ইতিমধ্যে সেলিনা আক্তারকে তালাক দিয়েছে তারপর থেকে সে আরও বেপরোয়া আচরণ শুরু করেছে।

খোকনের মামা মহি উদ্দিন বলেন, আমার ভাগিনা মানসিকভাবে অসুস্থ এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তার স্ত্রী সেলিনা আক্তার ব্যাংকের সব টাকা এবং জমিজমা বিক্রি করে সব টাকা নিজের নামে হাতিয়ে নিয়ে আমাদের সবাইকে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম জানান, খোকনের স্ত্রী অত্যন্ত অমানবিক কাজ করেছে। সহজ-সরল এবং মানসিক প্রতিবন্ধী ছেলের কাছ থেকে সমস্ত অর্থ এবং সম্পদ কেড়ে নেওয়া এবং তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়া একটি অত্যন্ত জঘন্য এবং অন্যায় কাজ।

     এই ক্যাটাগরির অন্যান্য নিউজ