দাগনভুঞা প্রতিনিধি:ফেনীতে ভরনপোষণের খরচ হতে মুক্তি পেতে নয় বছরের কন্যা সন্তানকে পানিতে ডুবিয়ে মারলেন নরপশু পিতা টিপু মিয়া। দাগনভুঞা থানা পুলিশ তদন্ত করে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে পাষাণ পিতাকে গ্রেফতার করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জয়নারায়পুর গ্রামে।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, সাড়ে আট বছর পূর্বে আসামী টিপু মিয়া(৩৭), পিতা-কবির আহাম্মদ, সাং- জয়নারায়নপুর, ২ নং রাজাপুর ইউপি, থানা- দাগনভূইয়া, জেলা- ফেনী এর সাথে স্ত্রী রোমানা আক্তার(২৫), পিতা-অলি আহম্মদ, মাতা-হালিমা বেগম, সাং-চন্দ্রপুর (করিম মেম্বারের বাড়ী), ৬নং ওয়ার্ড, ১নং সিন্দুরপুর ইউপি, থানা-দাগনভূঁঞা, জেলা-ফেনী এর ডিভোর্স হয়। ডিভোর্সের সময় টিপু মিয়ার ঔরষজাত কন্যা সন্তান জান্নাতুল আরিফা আক্তার (৯) স্ত্রী রুমানা আক্তারের সাথে নানা বাড়িতে চলে যায়। জান্নাতুল আরিফা আক্তার নানা বাড়ী হতে মাঝে মাঝে টিপু মিয়ার বাড়ীতে বেড়াতে যেত। জান্নাতুল আরিফা সিন্দুরপুর অদুদিয়া নুরানী মাদ্রাসার তৃতীয় শ্রেনীতে অধ্যয়নরত ছিল। টিপু মিয়া তার প্রথম স্ত্রীর দেনমোহর, খরপোষ ও প্রথম স্ত্রীর গর্ভের জান্নাতুল আরিফার ভরণপোষণ মেটাতে ১ম স্ত্রীর সাথে একাধিকবার শালিশ দরবার ও মামলায় জড়ান । টিপু মিয়া পুনরায় আমেনা আক্তার(২৭)কে বিয়ে করলে দ্বিতীয় স্ত্রীর গভে দুটি কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। টিপু মিয়া একজন অটোরিকশা চালক। সম্পত্তির উত্তরাধিকার ও ভরনপোষন প্রদান হতে মুক্ত হওয়ার জন্য টিপু মিয়া তাহার প্রথম স্ত্রীর গর্ভের কন্যা সন্তান জান্নাতুল আরিফা আক্তারকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
গত ১৩/০৬/২০২৩ খ্রিঃ হইতে আসামী টিপু মিয়া তার মেয়েকে তাহাদের বাড়ীতে বেড়াতে নেওয়ার জন্য বার বার ফোন করিতে থাকিলে গত ১৮/০৬/২০২৩ খ্রিঃ দুপুরে টিপু মিয়া শশুর অলি আহম্মদ জান্নাতুল আরিফা আক্তার(৯)’কে সাথে নিয়ে রাজাপুর বাজারে টিপু মিয়াকে দিয়ে আসে। গত ২১/০৬/২০২৩ খ্রিঃ বেলা অনুমান ০৩.০০ ঘটিকার সময় আসামী টিপু মিয়া তাহার মেয়ে জান্নাতুল আরিফা আক্তার(৯)’কে জোরপূর্বক টানাটানি করে গোসলের কথা বলে তাদের বাড়ীর পাশে পদুয়া পুকুরে নিয়ে যায়। আসামী টিপু মিয়া গোসল করানোর জন্য পুকুরের পানিতে জান্নাতুল আরিফাকে তার গলা সমান পানি পর্যন্ত নামায়। আসামী টিপু মিয়া দুই হাতে কোষ করে জান্নাতুল আরিফার মাথায় পুকুর থেকে পানি দিতে থাকে এবং আশেপাশের লোকজন খেয়াল করছে কিনা এদিক সেদিক তাকাতে থাকে। একপর্যায়ে লোকজনের আনাগোনা কম দেখে আসামী আসামী টিপু মিয়া তার দুই হাত দিয়ে তার মেয়ের মাথা চেপে ধরে পুকুরের পানিতে ডুবিয়ে হত্যা করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে নিজের মেয়ের লাশ পানিতে ডুবিয়ে রেখে গুম করে ঘরে চলে যায়।
এরপর আসামী টিপু মিয়া তার অটোরিক্সা নিয়ে তাদের বাড়ী হতে বাহিরে চলে যায়। বেলা অনুমান ০৩.৩০ ঘটিকায় আসামী টিপু মিয়া তাহার মোবাইল হইতে তাহার শশুর অলী আহম্মদকে ফোন করিয়া জানায় তার মেয়েকে বাড়ীতে পাওয়া যাইতেছেনা। তখন টিপু মিয়ার প্রথম স্ত্রী ভিকটিম জান্নাতুল আরিফার মাতা রোমানা আক্তার তাহার পিতা ও ফুফুকে নিয়ে টিপু মিয়ার বাড়ীতে গিয়ে টিপু মিয়া ও তার বাড়ীর লোকজনদের নিয়ে মাইকিং ও খোঁজা খুজির একপর্যায়ে টিপু মিয়ার বাড়ীর ২০ গজ দক্ষিণে থাকা পদুয়া পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোনায় পুকুরে পানিতে ডুবন্ত পেয়ে ইং ২১/০৬/২০২৩ খ্রিঃ বিকাল অনুমান ৫.০০ ঘটিকায় ভিকটিম জান্নাতুল আরিফাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে।
ভিকটিমের মা রোমানা আক্তার দাগনভূঁঞা থানায় অপমৃত্যুর সংবাদ প্রদান করিলে পুলিশ অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে ভিকটিমের লাশের সুরতহাল করে লাশ ফেনী সদর হাসপাতালে প্রেরণ করেন ও ময়না তদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করে। ঘটনার পর জান্নাতুল আরিফা পানিতে ডুবে মারা গেছে মর্মে জন্মদাতা পিতা টিপু মিয়া প্রচার করলেও ঘটনার পর পর দাগনভূঁঞা থানা পুলিশের গভীর নজরদারি ও নিরবিচ্ছিন্ন তৎপরতায় ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটিত হইলে আসামী টিপু মিয়া গা ঢাকা দেয়। ভরণপোষনের দায় হতে মুক্তি পেতে জন্মদাতা পিতা টিপু মিয়া কতৃক ৯ বছরের কন্যা জান্নাতুল আরিফাকে হত্যার বিষয়টি প্রকাশিত হলে টিপু মিয়ার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রেকর্ড পূর্বক রাজাপুর এলাকায় সাড়াশি অভিযান পরিচালনা করিয়া ২৫ জুন তারিখে আসামী টিপু মিয়াকে গ্রেফতার করা হয়।